Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফল আর্মিওয়ার্মের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ
বাংলাদেশে একটি নতুন পোকা যা ২০১৮ সালে প্রথম শনাক্ত হয়। যদিও এটি ভুট্টা ফসলের পোকা তবে অন্যান্য ফসল যেমনÑ ধান, জোয়ার, গম, আখ, নেপিয়ার ঘাস ও সবজিসহ ৮০ প্রজাতির ফসলকে আক্রমণ করতে পারে।
ফল আর্মিওয়ার্ম শনাক্তকরণের উপায় : ১. কীড়ার মাথা কালচে রঙের এবং তাতে উল্টাণ- আকৃতির বড় কীড়ায় দেখা যাবে। ২. শেষ থেকে দ্বিতীয় দেহখণ্ডের চারটি কালচে দাগ একটি বর্গাকৃতি সৃষ্টি করবে। ৩. পোকার প্রত্যেক দেহখণ্ডের উপর থেকে সুসজ্জিত চারটি উঁচু দাগ দৃশ্যমান হবে।


ফল আর্মিওয়ার্ম জীবনচক্র ও ভুট্টার ক্ষতি
ফল আর্মিওয়ার্মের জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপগুলো হলো ডিম, কীড়া (৬টি দশা), পুত্তলি এবং মথ।
ডিম : পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী মথ সাধারণত গুচ্ছাকারে পাতার উপরের অংশে ১০০-২০০টি ডিম পাড়ে। একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী মথ তার জীবনকালে ১৫০০-২০০০টি ডিম পাড়তে পারে। ডিমগুলো সুরক্ষিত পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। ডিম থেকে কীড়া পর্যায় যেতে প্রায় ১-৩ দিন সময় নেয়।


কীড়ার বৃদ্ধি পর্যায় (১-২) : প্রাথমিক পর্যায়ের কীড়া পাতা খেয়ে অর্ধস্বচ্ছ জাল তৈরি করে যাকে উইন্ডো বলে। নতুন ফোটা পোকাগুলো চকচকে সিল্কের মতো গুটি তৈরি করে, যার সাহায্যে এগুলো ঝুলে একই গাছের অন্য অংশে বা এক গাছ থেকে অন্য গাছে যায়। অল্প বয়স্ক গাছে কীড়া পাতার গোড়া  খেলেও পরিণত গাছের মোচার সিল্কের চারপাশের পাতা খেতে বেশি পছন্দ করে। কীড়ার বৃদ্ধি পর্যায় (১-২) সম্পন্ন করতে প্রায় ৩-৬ দিন সময় লাগে।


কীড়ার বৃদ্ধি পর্যায় (৩-৬) : ৩-৬ ধাপের কীড়াগুলো পাতার গোড়ার সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে বেশির ভাগ ক্ষতি সাধন করে, যার ফলে পাতায় জালিকা বা ছিদ্র তৈরি হয়। কম বয়স্ক গাছের পাতা খাওয়ার ফলে গাছের বর্ধিতাংশ মারা যায় এবং যার ফলে নতুন কোনো পাতা বা মোচা তৈরি হয় না। যখন কীড়াগুলো বড় হয় তখন প্রতিটি পত্রাবর্তে মাত্র ১-২টি কীড়া পাওয়া যায়। এ অবস্থায় এগুলো নিজেদের মধ্যকার  খাদ্যের প্রতিযোগিতা কমানোর জন্য অনেক সময় একে অপরকে খেয়ে ফেলে।  বেশকিছু পরিমাণ ‘ফ্রাজ’ (কীড়ার বিষ্ঠা) পত্রাবর্তে জমা হয় যা শুকিয়ে গেলে মিহি গুঁড়ার মতো দেখায়। পূর্ণবয়স্ক গাছে যখন মোচা বের হয় তখন কীড়া মোচায় আক্রমণ করে এবং পত্রমঞ্জুরি ভেদ করে মোচায় প্রবেশ করে বিকাশমান শস্যদানা (বীজ) খেয়ে ফেলে। কীড়ার বৃদ্ধি পর্যায় (৩-৬) সম্পন্ন করতে প্রায় ৭-১৪ দিন সময় লাগে।


পুত্তলি থেকে পূর্ণবয়স্ক : প্রায় ১৪ দিন পর পরিণত কীড়া মাটিতে পড়ে যায়, যাতে এরা পুত্তলি গঠন করতে পারে। পুত্তলি হওয়ার আগে কীড়া মাটির ২-৮ সেমি. গভীরে প্রবেশ করে। যদি মাটি খুব বেশি শক্ত থাকে তাহলে পাতার খড়কুটা/উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে নিজেদের ঢেকে ফেলে। পুত্তলিগুলো ২-৩ সেমি. লম্বা ও বাদামি রঙের হয়। প্রায় ৭-১০ দিন পর পুত্তলি থেকে পূর্ণবয়স্ক মথগুলো বের হয় যা পুনরায় জীবনচক্র শুরু করে। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে ফল আর্মিওয়ার্মের জীবনকাল পরিবর্তিত হয়। উষ্ণ তাপমাত্রায় এদের জীবনকাল সম্পন্ন হতে ১০-১৩ দিন সময় লাগে যেখানে শীতল তাপমাত্রায় এদের সময় লাগে ১৪-২১ দিন।
 

প্রতিরোধ
ফল আর্মিওয়ার্মের সর্বোচ্চ আক্রমণকে এড়ানোর জন্য ভুট্টা বীজ আগাম বপন করতে হবে। এজন্য খরিফ মৌসুমে, ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বীজ বপণ করতে হবে। রবি মৌসুমে, নভেম্বরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত বীজ বপণ করতে হবে। ভুট্টা বপনের পূর্বে সায়ান্ট্রনিলিপ্রলি বা ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক দিয়ে বীজ শোধন করলে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
ভুট্টা বীজ কিছুদিন পরপর কয়েক দফায় বপন করলে দীর্ঘ সময় ধরে খাবার পাওয়ার ফলে পোকাটির আক্রমণ ক্রমাগত চলতেই থাকবে। তাই বারবার না করে একসাথে পুরো মাঠে/এলাকায় বীজ বপন করা উত্তম। সম্ভব হলে ফল আর্মিওয়ার্ম প্রতিরোধী ভুট্টার জাত ব্যবহার করতে হবে। স্বল্প জীবনকালের ভুট্টার জাত চাষ করতে হবে।


পোকার আক্রমণ হলেও যেন গাছ সজীব থাকে এবং ক্ষতি কম হয় সেজন্য সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি, আইল ও আশপাশের জায়গা আগাছামুক্ত রাখতে হবে (বিশেষত : ঘাস জাতীয় আগাছা)। উপকারি পোকা ও পাখির বাসস্থানের জন্য জমির চারপাশে ডালজাতীয় (লিগিউম) ফসল অথবা বহুবর্ষজীবী ফুলগাছের বেড়া দিতে হবে। ভুট্টার সাথে সাথী ফসল হিসেবে শিম, চীনাবাদাম, অড়হর, সয়াবিন ইত্যাদি সহনশীল ফসল চাষ করা ভালো।


পর্যবেক্ষণ
বীজ অংকুরিত হওয়ার পর সপ্তাহে দুইবার মাঠ পরিদর্শন করতে হবে। খুব সকালে অথবা সূর্যাস্তের সময় এ পোকার উপস্থিতি পরীক্ষা করতে হবে, কারণ এ সময় পোকাটির আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) মাঠের যেকোনো পাঁচটি স্থানে পরপর দশটি করে গাছ ইংরেজি ‘’ি এর মত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পর্যবেক্ষণকালে, গাছে আর্মিওয়ার্মের ডিম, কীড়া বা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আক্রমণের লক্ষণ এবং আক্রান্ত গাছের সংখ্যা লিখে রাখতে হবে।
পাতায় আর্মিওয়ার্মের আক্রমণের লক্ষণ, পাতা অথবা মোচায় ছোট কীড়া দেখা যেতে পারে। উপরের কুণ্ডলিত কচি পাতায় জানালা আকৃতির ছোপ (উইন্ডো পেন), পাতায় লম্বা ছিদ্র এবং কচিপাতায় মলদানা দেখে পোকাটির উপস্থিতি শনাক্ত করতে হবে। বড় খামারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ সম্ভব না হলে ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পরিদর্শনের সময় পোকার ডিম পেলে তা তৎক্ষণাৎ নষ্ট করে ফেলতে হবে যেন ভবিষ্যতে সেগুলো ফুটে কীড়া বের না হয়। গাছ যখন হাঁটু উচ্চতায় থাকে সে অবস্থায় ২০ শতাংশের বেশি গাছ আক্রান্ত হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে এবং গাছ যদি কাঁধ উচ্চতায় থাকে তবে ৪০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হলে দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, যদি গাছ টাসেল ও সিল্ক পর্যায়ে থাকে তখন কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না।


দমন ব্যবস্থাপনা
যদি ফসলে ফল আর্মিওয়ার্ম পাওয়া যায় তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সাথে সাথে প্রতিবেশীদের সতর্ক করতে হবে।
যান্ত্রিক দমন : ফসলের কোন ডিমগুচ্ছ এবং কীড়া পাওয়া গেলে নিয়মিতভাবে হাত দিয়ে তুলে নষ্ট করা; প্রতি একরে ৫টি ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করা; গাছের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে হাঁটু উচ্চতা পর্যন্ত শতকরা ২০টির বেশি এবং মাঝারি  উচ্চতা থেকে পরিণত অবস্থায় শতকরা ৪০টিরও বেশি গাছ আক্রান্ত হয় তবে যান্ত্রিক দমনসহ নিম্নে উপযুক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে হবে।


জৈব দমন : জমিতে যদি পূর্ণাঙ্গ মথ বা ডিমের উপস্থিতি দেখা যায় তাহলে প্রাকৃতিক শত্রæ হিসেবে বিঘাপ্রতি ১৪-১৫ হাজার ট্রাইকোগ্রামা এবং যদি কীড়ার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয় তবে বিঘা প্রতি ১০০-১৫০টি ব্রাকন হেবিটর অবমুক্ত করা।


জৈব বালাইনাশক : প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলি হারে নিম জাতীয় কীটনাশক এজাডিরেক্টিন প্রয়োগ করা। প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে এসএফএনপিভি (ভাইরাস ভিত্তিক জৈব বালাইনাশক) প্রয়োগ করা। পোকার আক্রমণের পর প্রথমবার প্রয়োগের ১০ দিন পরপর করে দুইবার প্রয়োগ করা। প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হারে স্পিনোস্যাড প্রয়োগ করা।


সরাসরি দমন ও সীমাবদ্ধতা
বিস্তৃত পরিসর কার্যকারিতার কীটনাশক ব্যবহার না করাই উত্তম কেননা এতে উপকারি পোকারাও মারা যায় এবং তা প্রয়োগকারীর স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। রাসায়নিক এমনকি জৈব কীটনাশক ব্যবহার করার সময়ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন : প্রতিরক্ষাকারী পোশাক যেমন হাতমোজা, মুখোশ, বুট, এপ্রোন/কোট ইত্যাদি পরিধান করা। কীটনাশকের গায়ে লেখা নির্দেশিকা ও ব্যবহারবিধি মেনে চলা যেমন-প্রয়োগ মাত্রা, কয়দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে, সর্বোচ্চ কতবার প্রয়োগ করা যাবে, ফসল তোলার সর্বোচ্চ কতদিন আগে প্রয়োগ করা যাবে ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে যে, অব্যবহৃত কীটনাশক বা এর পাত্র কখনোই পানির উৎসে ধোয়া বা ফেলা যাবে না।


পোকার আক্রমণ বেশি হলে ছোট কীড়া দমনের জন্য পুরো ফসলে এবং বড় পোকার জন্য শুধুমাত্র আক্রান্ত গাছগুলোতে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগের পর তা পোকার উপর প্রভাব ফেলতে কিছু সময় লাগে এজন্য তাৎক্ষণিক কোনো ফলাফল পরিলক্ষিত নাও হতে পারে। তাই প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর গাছে নতুন করে আক্রমণের লক্ষণ আছে কি না তা দেখে পরবর্তী কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


আক্রান্ত কুণ্ডলিত কচিপাতাকে লক্ষ্য করে সিস্টেমিক কীটনাশক (বিশ্বখাদ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত, ইউ শ্রেণীর অধিভুক্ত) প্রয়োগ করতে হবে। যেমন- এবামেকটিন ১.৮ ইসি ১.৫ মিলি/লিটার; এমামেকটিন বেঞ্জয়েট ৫এসজি ০.৪ গ্রাম/লিটার; ক্লোরান্ট্রিনিলিপ্রলি ১৮.৫ এসসি ০.৪ মিলি/লিটার। সাধারণত এ জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রয়োগের ২১ দিনের মধ্যে ফসল কোনোভাবেই খাবার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
পরবর্তী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বনের ৭ দিন ফল আর্মিওয়ার্মের অবস্থা যাচাই করতে হবে।

সহকারী তথ্য অফিসার (শ.উ.), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা; ফোন : ৫৫০২৮৪৪১, ই- মেইল : aiocp@ais.gov.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon